প্রকাশিত: ০৬/০৫/২০১৯ ৭:১৭ পিএম

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি অবগত। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সমাজের প্রাপ্ত বয়স্ক সব মুসলমানই এ মাসে রোজা রাখেন। তার পরও এমন অনেকেই আছেন যাদের এ মাসে রোজা না রাখলেও চলে। এখানে আমরা কাদের জন্য এবং কোন কোন অবস্থায় রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে- সে ব্যাপারে আলোচনা করবো।

১. মুসাফির
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।’ -সূরা বাকারা : ১৮৫

মাসয়ালা : শরয়ি সফর (অর্থাৎ ৪৮ মাইল তথা ৭৭ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছেন যিনি) তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে মুসাফিরের জন্য উত্তম হচ্ছে যদি কষ্ট কম হয়, তাহলে রোজা পালন করা। -সূরা বাকারা : ১৮৪; হেদায়া : ১/২২১; জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া : ১/২০

মাসয়ালা : অস্বাভাবিক কষ্ট হলে রোজা রাখা মাকরূহ। এ অবস্থায় রোজা না রেখে পরে তা কাজা করে নিতে হবে। আছিম (রহ.) বলেন, হজরত আনাস (রা.) কে সফরকালে রোজা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘যে রোজা রাখবে না সে অবকাশ গ্রহণ করল। আর যে রোজা রাখল সে উত্তম কাজ করল।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৬/১৩২

মাসয়ালা : সফর অবস্থায় নিয়ত করে রোজা রাখা শুরু করলে তা ভাঙা জায়েজ নয়। কেউ ভেঙে ফেললে গোনাহগার হবে। তবে কাফফারা দিতে হবে না। শুধু কাজা করবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৩১

মাসয়ালা : যে ব্যক্তি মুকিম (স্থায়ী বাসিন্দা) অবস্থায় সাহরি খেয়ে সফর শুরু করেছে তার জন্য সফরের অজুহাতে রোজা ভাঙা জায়েজ নয়। ভাঙলে গোনাহগার হবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৬

মাসয়ালা : মুসাফির সফরের কারণে রোজা রাখেনি, কিন্তু দিন শেষ হওয়ার আগেই মুকিম হয়ে গেছে। সেদিনের অবশিষ্ট সময় রমজানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। আর পরে এ রোজার কাজা করে নেবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/২২১, হাদিস : ৯৪৩৬-৯৪৩৮

২. অসুস্থ ব্যক্তি
মাসয়ালা : রোজা রাখার কারণে কোনো জটিল রোগ সৃষ্টি বা পুরাতন রোগ বৃদ্ধির প্রবল ধারণা হলে, তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। সুস্থ হওয়ার পর কাজা করে নেবেন। -সূরা বাকারা: ১৮৪

উল্লেখ্য, আশঙ্কা যদি সুস্পষ্ট হয় তাহলে তো কথা নেই। নতুবা একজন অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামতের প্রয়োজন হবে। -আল মুহিতুল বুরহানি: ৩/৩৫৯; আদ দুররুল মুখতার: ২/৪২২

শুধুই খেয়ালের বশে রোজা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয নেই। বরং যখন কোনো মুসলমান দ্বীনদার চিকিৎসক কর্তৃক রোজা না রাখার ব্যাপারে আদিষ্ট হবে, কেবল তখনই শরিয়ত রোজা ভাঙ্গার অনুমতি দেয়। -দুররে মুখতার : ২/৪৪২

মাসয়ালা : কঠিন কোনো কাজ করার ফলে ভীষণ পিপাসার্ত হয়ে পড়লে এবং এতে প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দিলে রোজা ভেঙ্গে ফেলা জায়েজ আছে। পরবর্তিতে এর কাজা আদায় করতে হবে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা প্রয়োজনে এমন কাজ করা গোনাহ। কিন্তু কেউ যদি এতোই দরিদ্র বা দুঃস্থ হয় যে, ঘরে তার খোরাকির কোনো ব্যবস্থা নেই, তখন অপারগতাবশত এমন হলে গোনাহ নেই। -রদ্দুল মুহতার : ২/৪২০০

৩. দুর্বল ব্যক্তি
মাসয়ালা : অতিশয় বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হলে। যে ব্যক্তি বার্ধক্যজনিত কারণে কিংবা কোনো স্থায়ী জটিল রোগের কারণে রোজা রাখতে অক্ষম, ভবিষ্যতেও সুস্থতা লাভের সম্ভাবনা নেই তিনি ফিদিয়া (প্রতি রোজার জন্য পৌঁনে দুই সের গম বা তার মূল্য) আদায় করবেন। কিন্তু যদি পরবর্তীকালে কখনো সুস্থ হয়ে যান, তাহলে এ রোজাগুলোর কাজা করে নেয়া জরুরি। -সূরা বাকারা : ১৮৪; রদ্দুল মুহতার : ২/৪২৭; জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া : ১/১২০

বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত সাবেত বুনানি (রহ.) বলেন, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) যখন বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে সক্ষম ছিলেন না তখন তিনি রোজা না রেখে (ফিদইয়া) খাবার দান করতেন। -মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৫৭০

৪. গর্ভবতী
মাসয়ালা : রোজা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলার নিজের কিংবা সন্তানের প্রাণহানি বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা হলে তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। পরে এ রোজা কাজা করে নেবে। -আল মুহিতুল বুরহানি: ৩/৩৫৯

মাসয়ালা : রোজার কারণে দুগ্ধপোষ্য সন্তানের ক্ষতির পূর্ণ আশংকা বোধ করলে তিনিও রোজা রাখবেন না। -রদ্দুল মুহতার : ২/৪২২; আল ফাতাওয়াল হিন্দিয়া : ১/২০৭; আলহিদায়া : ১/২২২; আপকা মাসায়েল আওর উনকা হল : ৪/৫৬৭

৫. দুগ্ধদানকারী নারী
মাসয়ালা : রোজার কারণে সন্তান দুধ না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে এমন আশঙ্কা হলে দুগ্ধদানকারীনীও আপাতত রোজা ভাঙ্গতে পারবে এবং পরে কাজা করে নিবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪২২ হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা মুসাফিরের জন্য রোজার হুকুম শিথিল করেছেন এবং নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোজার হুকুম শিথিল করেছেন। -জামে তিরমিজি: ১/১৫২, হাদিস : ৭১৫

৬. ঋতুবর্তী মহিলা
মাসয়ালা : মাসিক ঋতুস্রাব তথা পিরিয়ডের (হায়েজ) সময় এবং সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ৪০ দিন (নেফাস) মহিলাদের ওয়াজিব হল রোজা বর্জন করা। এ অবস্থায় নামাজ ও রোজা কোনোটাই আদায় করা জায়েয হবে না। সুস্থতার পর তাদের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। নামাজের কাজা আদায় করতে হবে না। হাদিসে এসেছে, উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো হায়েজ থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন, ‘এ অবস্থায় আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নামাজের নয়।’ – সহিহ বোখারি ও মুসলিম

রোজা কাজা করা আর নামাজ কাজা না করা সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) যা বলেছেন সমস্ত উলামায়ে কেরাম তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অর্থাৎ ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এসব লোকের রোজার দিন অবশিষ্ট সময় যেভাবে কাটাবে
১. অসুস্থতা, বার্ধক্য ইত্যাদি শরীয়তসম্মত কোনো সমস্যার কারণে কেউ রমজানের রোজা রাখতে সক্ষম না হলে সে পানাহার করতে পারবে। তবে রোজাদারদের অগোচরে পানাহার করা উচিত।

২. মুসাফির যদি দিনের বেলা সফর থেকে বাড়ি ফিরে আসে তাহলে অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৬/২২১

৩. তদ্রুপ দিনের বেলা কোনো মহিলার পিরিয়ড বন্ধ হলে অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৬/২২০; মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক: ৪/১৭০

পাঠকের মতামত

তুরস্কে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ

ইসলামী ঐতিহ্যের স্মৃতি বিজড়িত তুরস্কে অনুষ্ঠিত ৯ম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ, ...